নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যানের নির্দেশে প্রকাশ্যে দিনমজুর আমির হোসেন হত্যাকান্ডের ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের একাধিক টিম মাঠে কাজ করলেও এখনো কেউই গ্রেফতার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমির হোসেনের পরিবার। আসামী পক্ষের হুমকিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে আমির হোসেনের পরিবারের প্রত্যেকটি সদস্য।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) নিহত আমির হোসেনের স্ত্রী ছকিনা ইয়াছমিন বাদি হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদরকে প্রধান আসামি করে ১০জনের নাম উল্লেখপূর্বক আরো ১২জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দায়ের করেছে।
মামলা দায়েরের পর হত্যাকান্ডের নির্দেশদাতা প্রধান আসামি ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর আত্মগোপনে চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। আমির হোসেনকে হত্যার দুইদিন পর প্রকাশ্যে দেখা গেলেও মামলা হওয়ার পরপরই আত্মগোপনে চলে গেছেন বির্তকিত চেয়ারম্যান আদর। হত্যা মামলায় তাকে আসামি না করতে বাদি ছকিনা ইয়াছমিনকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেছেন।
আমির হোসেনের পরিবারের দাবী, ইউপি চেয়ারম্যান আদরের লোকজন হত্যা মামলা তুলে নিতে পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। এমনকী ২৭ মে শুক্রবার আদরের স্ত্রী চকরিয়া পৌরসভা সদরে প্রকাশ্যে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করে মামলা প্রত্যাহারের দাবী করছেন। তাদের অব্যাহত হুমকি ধমকিতে আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন আমির হোসেনের পরিবার। আমির হোসেন হত্যার প্রধান আসামি আদরসহ অন্যান্য আসামিদের দ্রুত সময়ে গ্রেফতার করার দাবী জানান তার পরিবার।
স্থানীয় লোজন জানান, হাসানুল ইসলাম আদর ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। একেরপরএক বির্তকিত কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাবাসী। বেপরোয়া হওয়ার ফেছনে স্থানীয় সাংসদকে দায়ী করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। ইউপি চেয়ারম্যান আদর দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় সাংসদ জাফর আলম এমপির ব্যক্তিগত সহকারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ব্যক্তিগত সহকারি থাকার সুবাদে ডুলাহাজারা ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর। তিনি দলীয় প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার পর ডুলাহাজারা ইউনিয়নে গড়ে তুলেন তার নামে আদর বাহিনী।
সম্প্রতি ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হওয়ার পর প্রতিপক্ষের লোকজনকে হয়রানীর মাত্রা বেড়ে যায়। ডুলাহাজারা বালুমহাল, বালু উত্তোলন, চিংড়ীঘের দখল, পাহাড় নিধন ও বনবিভাগের জায়গা দখল সহ নানা অপরাধের নেতৃত্বে দিচ্ছেন আদর বাহিনী। গতবছর বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের সামনে চকরিয়ার তিন সাংবাদিককে হামলা চালিয়ে আলোচনায় আসেন আদর ও তার বাহিনী। গত তিনমাসে তার বাহিনী ৬-৭টি হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। তার হামলা থেকে ডুলাহাজারার দুইজন কৃতি ফুটবলারও বাদ যায়নি। এসব ঘটনায় থানায় মামলা দিতে গেলে হয়রানীর শিকার হতে হয় তাদেরকে। সর্বশেষ ২৪ মে চেয়ারম্যান আদরের নেতৃত্বে প্রকাশ্যে দিনমজুর আমির হোসেনকে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা নিশ্চিত করে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, নিহত আমির হোসেনের স্ত্রীর দেয়া এজাহারটি থানায় মামলা হিসেবে রুজু করা হয়েছে। পুলিশ মামলার আসামীদের গ্রেফতারে একাধিক টীম মাঠে কাজ করছেন। জড়িতদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলেও জানান তিনি।
নিহতের স্ত্রী ছকিনা ইয়াসমিন বলেন, গত সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ডুমখালী এলাকায় বনের ত্রাস হিসেবে খ্যাত আবদুর রহমান বাহিনীর হাতে হত্যাকান্ডের শিকার হয় আমার স্বামী আমির হোসেন। দূর্বৃত্তরা বিচারের কথা বলে আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে ও হাত পা বেঁধে গুলি করে।
তিনি আরও বলেন, সদ্য সমাপ্ত ইউপি নির্বাচনের ইস্যুকে কেন্দ্র করে ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদরের নির্দেশে তার সামনেই চেয়ারম্যানের লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে হত্যা করে।
বিধবা ছকিনা ইয়াছমিন বলেন, আমার স্বামী ও তাদের আত্মীয়স্বজন গত ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হাসানুল ইসলাম আদরের পক্ষে কাজ না করায় নির্বাচন পরবর্তী তিনি প্রতিশোধ নিতে তার লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সুপরিকল্পিতভা স্বামী আমির হোসেনকে হত্যা করে।
ছকিনা ইয়াসমিন বলেন, আমার স্বামী হত্যার ঘটনায় তিনদিন পার হলেও এখনো এ বর্বর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ফলে আমি এতিম তিন শিশু সন্তানকে নিয়ে এখন চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছি। অবিলম্বে স্বামী হত্যার আসামীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের নিকট জোর দাবী জানান নিহত আমির হোসেনের স্ত্রী ছকিনা ইয়াসমিন।
পাঠকের মতামত: